গত কয়েক বছরে সারা বিশ্বজুড়ে হওয়া একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে ফেসবুক সহ অন্যান্য সোসাল মিডিয়ায় কী ধরনের ছবি পোস্ট করা হচ্ছে তা দেখে যে কোনও মানুষের মনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করে নেওয়া সম্ভব। কীভাবে? এই উত্তর পাবেন। তবে তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো। যখন আপনার মন খারাপ থাকে তখন আপনি কি মজার কিছু পোস্ট করেন ফেসবুকে? না, একেবারেই না। তখন সাধারণত মন ভাল করে দিতে পারে এমন সব কোট পোস্ট করে থাকি। একেবারেই! এমনটা প্রায় সবাই করে থাকে। কেন জানেন? কারণ গবেষণায় দেখা গেছে মনের অবস্থার উপর অনেকাংশেই আমাদের কাজকর্ম নির্ভর করে থাকে। তাই তো সোসাল মিডিয়ায় আপনার অ্যাকটিভিটি বিশ্লেষণ করে আপনার মনের অবস্থা সম্পর্তে বুঝে নেওয়াটা খুব একটা কঠিন কাজ নয়।
আরও একটু গভীরে যাওয়া যাক:
সাইকোলজিস্টদের মতে যাদের মন এমনিতেই ভাল নেই। তার যদি সে সময় বেশি সময় ফেসবুকে কাটান, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কীভাবে? খেয়াল করে দেখবেন মন খারাপ থাকাকালীন যদি ফেসবুকে দেখেন কাছের কোনও বন্ধু তার বান্ধবীর সঙ্গে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন। আর আপনি এখনও ভারত ভ্রমনটাই ঠিক মতো করে উঠতে পারেননি, তাহলে মন কারাপ আরও বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মনোবলও মারাত্মক কমে যেতে শুরু করে। ফলে সে সময় আপনি এমন ছবি বা কোট পোস্ট করে বসেন, যা খুব মন খারাপ করা। এইভাবে মনোবিজ্ঞানীরা আপনার পোস্ট দেখে খুব সহজেই আপনার মনের ভাল-মন্দের হদিশ দিতে পারেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপার অনুযায়ী মন খারাপ থাকাকালীন বেশি মাত্রায় ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করলে সিভিয়ার ডিপ্রেশন বা অ্যাংজাইটিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পায়। তাই মন ভাল না থাকলে সোসাল মিডিয়ায় প্রবেশ নিষেধ।
নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করা বন্ধ করুন:
সবার জীবনই আলাদা আলাদা গোছের হয়। কেউ হয় সাংবাদিক, তো কেউ শিক্ষক। একজন সাংবাদিক যেমন জীবন কাটাবেন, তেমনটা নিশ্চয় একজন শিক্ষকের পক্ষে কাটানো সম্ভব নয় অথবা একজন ধনীর জীবনযাত্রার সঙ্গে নিশ্চয় সাধারণ মধ্যবিত্তের কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই ফেসবুকে কোনও বন্ধুকে অনন্দে থাকতে দেখে মন খারাপ করাটা বোকামি। তাই এইসব ভুলভাল না ভেবে নিজের জীবনকে কীভাবে সুন্দর করা যায়, সেদিকে নজর ফেরানো উচিত।
ইন্টারনেটের ব্যবহার আমাদের মনকে কমজোরি করে তোলে:
২০১৬ সালে ১৭৮৭ জন যুবকের উপর করা এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যারা দিনের বেশিটা সময় সোসাল মিডিয়ায় কাটান, তাদের ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ মানুষের তুলনায় বেশি থাকে। এখানেই শেষ নয়, ২০১৩ সালে হওয়া আরেক গবেষণায় দেখা গেছে ফেসবুক ব্যবহারের সঙ্গে মনের ভালা থাকা বা মন্দ থাকার সরাসরি যোগ রয়েছে। কারণ গবেষকরা লক্ষ করেছিলেন ফেসবুক ব্যবহারের আগে মন যতটা আনন্দে থাকে, ততটা কিন্তু পরে থাকে না। তাই বোকার মতো অন্যের সঙ্গে নিজের জীবনের তুলনা করা একেবারেই উচিত নয়, বিশেষত যখন ফেসবুক করছেন তখন। তবে একথা ঠিক যে, সবাই যে এমনটা সচেতনভাবে করে থাকেন, তা নয়। তাই তো আনন্দে থাকতে চিকিৎসকেরা যতটা সম্ভব কম মাত্রায় সোসাল মিডিয়া ব্যবহার করতে বলছেন।
মন এবং ফেসবুক:
গত সপ্তাহে ই পি জে ডেটা সায়েন্সে প্রকাশিত পৃথিবী সব থেকে বড় এই বিষয়ক কেস স্টাডির দিকে নজর ফেরালে এই আর কোনও সন্দেহ থাকবে না যে মন খারাপ থাকাকীলন সোসাল মিডিয়ায় ঘোরাঘুরি করা কতটা ভয়ানক। এই সমীক্ষায় দেখা গেছে মন খারাপ মানেই ডিপ্রেসিং কোট, সাদা-কালো অথবা গ্রে ছবির পোস্ট বেড়ে যায়। প্রশ্ন করতেই পারেন, কীভাবে এমন সিদ্ধান্তে এলেন বিশেষজ্ঞরা? কেস স্টিডিটি চলাকালীন প্রায় ১৬৬ টি একাউন্ট থেকে সংগ্রহ করা ৪৪০০০ টি ছবি বিশ্লেষণ করেছিলেন গবেষকরা। তাতে দেখে গেছে যারা এমন ধরনের ছবি বা কোট পোস্ট করেছেন, তাদের মধ্যে সবারই মানসিক রোগের ইতিহাস রয়েছে, যার মধ্যে ৫০ শতাংশই ডিপ্রেশনের শিকার। তাই কোনও বন্ধুকে যদি টানা কয়েকদিন ধরে মন খারাপ করা ছবি বা লেখা পোস্ট করতে দেখেন, তাহলে শীঘ্র তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রয়োজন চিকিৎসকেরা সঙ্গে পরামর্শ করতে ভুলবেন না। ভুলে যাবেন না যে আমাদের দেশে কম বয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা চোখে পরার মতো বৃদ্ধি পয়েছে আর এর পিছনে দায়ি ডিপ্রেশন।
মন খারাপ এবং আমাদের দেশ:
পরিসংখ্যান বলছে ডিপ্রেশনের কারণে কম বয়সিদের মধ্য়ে আত্মহত্যা করার প্রবণতা যে যে দেশে বেড়েছে, তার মধ্য়ে ভারতের স্থান একেবারে উপরের দিকে। প্রতি বছর আমাদের দেশে ১০০,০০০ জন ভারতীয় মধ্য়ে প্রায় ৫০ জন আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন, যাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৫-২৯ বছরের মধ্যে।
সূত্র : ইন্টারনেট